যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল আর নেই
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবার যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল আর নেই। গতকাল বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এ্যাপোলো) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর রুহের মাগফিরাত ও দোয়া কামনা করা হয়েছে। শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল সহকর্মী ব্যবসায়ী ও বন্ধুবান্ধবরা হাসপাতালে ছুটে যান। নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এক শোকবাণীতে জানান, নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের শিল্প বিকাশের পথিকৃৎ।
Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.
নুরুল ইসলাম বাবুলের লাশ এভার কেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ বাদ জোহর তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান যমুনা ফিউচার পার্ক (শপিং মল) জামে মসজিদে সীমিত পরিসরে নামাজে জানাজা হবে। এরপর রাজধানীর বনানী গোরস্থানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
যমুনা ফিউচার পার্কে কর্মরত অবস্থায় তিনি ১৪ জুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। যমুনা গ্রুপের পরিচালক ড. মো. আলমগীর আলম বলেন, বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় বাংলাদেশ, চীন, সিঙ্গাপুর- এ তিন দেশের চিকিৎসকের নেতৃত্বে বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি চীনের তিনটি হাসপাতাল ও সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।
নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর তিন মেয়ে- সারীয়াত তাসরীন সোনিয়া, মনিকা নাজনীন ইসলাম ও সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।
নুরুল ইসলাম বাবুলের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩ মে। তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের স্বত্বাধিকারী। মেধাবী এই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠিত যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে তিনি এ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক, নির্মাণাধীন যমুনা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। এ ছাড়া ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, বস্ত্র, গার্মেন্ট, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ, টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ। গত কয়েক বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম সহায়ক পণ্য বিশ্বমানের টায়ার শিল্প গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
নুরুল ইসলাম বাবুল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। একজন দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক ও আধুনিক চিন্তার সাহসী এই উদ্যোক্তা তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন।
সর্বশেষ করোনার চিকিৎসায় কুড়িলে ৩০০ ফিট সড়কের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম বাবুল। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দানবীর। সাধারণ মানুষকে অকাতরে দান করতেন। এ ছাড়া জাতীয় দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে তিনি সাধ্যমতো সরকারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। সর্বশেষ চলমান করোনা দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিলেন। করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা হিসেবে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সদস্যদের জন্য তিনি যমুনা গ্রুপ থেকে নিরাপত্তাসামগ্রী দান করেন। এ ছাড়া অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে করোনা মোকাবিলায় সহজ ও সুলভমূল্যে যমুনা গ্রুপ থেকে তৈরি করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। করোনা সংক্রমণ সুরক্ষায় যমুনা গ্রুপ গুণগতমানের স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে।
বিশিষ্টজনদের শোক
যমুন গ্রুপের চেয়ারম্যাান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, ব্যবসায়ী নেতা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সাংবাদিক নেতা, সাংবাদিক সংগঠন, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পোশার মানুষ। পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি তাঁর বাণীতে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ পার্টির নেতা-কর্মীরা।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জেএসডির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। শোক জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিগত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন শোক জানিয়েছেন। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান চৌধুরী লাহরীসহ ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা গভীর শোক জানিয়েছেন। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে যমুনা গ্রুপে।