Categories
allPost

এন্ড্রু কিশোরের গানের সামাজিক তাৎপর্য

297 people 👁️ing this randomly

এন্ড্রু কিশোরের গানের সামাজিক তাৎপর্য

প্রশ্ন জাগে, এন্ড্রু কিশোরের গান গত শতকের নব্বইপূর্ববর্তী একটি প্রজন্মের কাছে অনেক পরিচিত এবং জনপ্রিয় হলেও কেন এখনকার তরুণ প্রজন্ম তার গানের প্রতি তেমন মোহাচ্ছন্ন হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তরে একক কোনো কারণ বলা না গেলেও বলা যেতে পারে বাংলা সিনেমার প্রোডাকশন ভ্যালুর নিম্নগামিতা, ডিশ-অ্যান্টেনার প্রবেশ বা ইন্টারনেটের আগমনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় এবং পশ্চিমা হেজেমনিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ নতুন প্রজন্মের এবং অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতাদের সাংস্কৃতিক রুচি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই সাংস্কৃতিক রুচি বলতে ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়েরে বোর্দু ব্যক্তি কোন ধরনের গান শুনবে, কোন ধরনের সিনেমা দেখবে, কোন ধরনের হলে গিয়ে সিনেমা দেখবে বা আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনে যাবে কি না, তা বুঝিয়েছেন।

Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.

Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.

ব্যক্তি তার সাংস্কৃতিক রুচি তৈরির মধ্য দিয়ে সামাজিকভাবে তার শ্রেণি পরিচয় নির্মাণ করে, নিজেকে অন্যের থেকে ভিন্ন করে। মধ্যবিত্ত হিসেবে শহুরে তরুণদের কাছে এখন হয়তো এন্ড্রু কিশোরের গানের থেকে পশ্চিমা প্রভাবে প্রভাবান্বিত বাংলা ব্যান্ড, রক, হিপহপ বা বলিউড কিংবা পশ্চিমা মিউজিকের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকবে, কারণ হেজেমনিক বা প্রবল সংস্কৃতি বলতে তরুণরা এখন এগুলোকেই বোঝে। ব্যক্তিক সাংস্কৃতিক রুচি গড়ে ওঠার পেছনে তার পারিবারিক অবস্থান, অভ্যাস, সামাজিকীকরণ এবং তার শিক্ষা প্রভাব ফেলে। ব্যক্তি তার সাংস্কৃতিক রুচি নির্মাণের জন্য সামাজিক শ্রেণি মূল্যমান অনুযায়ী পছন্দের সংগীত, সিনেমা বা আর্টের শ্রেণীকরণ করে এবং তার চর্চা গড়ে তোলে। ব্যক্তি এই শ্রেণীকরণ করে সংগীত, সিনেমা কিংবা আর্টের গুরুত্বকে মাথায় রেখেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ব্যক্তির এই শ্রেণীকৃত এবং চর্চাকৃত সংগীত, সিনেমা বা আর্টই ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা এবং সত্তা তৈরি করে।

বিগত শতকের নব্বইপরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নব্য-উদারনীতিবাদের মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয় মূলত পোশাকশিল্প, নির্মাণশিল্প, অভিবাসন ব্যবসার মধ্য দিয়ে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির তরুণ প্রজন্ম পশ্চিমা এবং মুম্বাই উৎসারিত হিন্দি আধুনিক সংস্কৃতির গ্রাহক হতে থাকে। শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে যেমন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তেমনি সন্তানদের সংস্কৃতি রুচিরও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মানের দিক থেকে ‘উচ্চ মার্গীয়’ এবং চিহ্নের মূল্য বা সাইন ভ্যালু সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রোডাক্ট ভোগের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান উন্নততর করার প্রয়াস বা শহুরে নব্য ধনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পূর্বেকার বাংলা সিনেমার গ্রাহকরাও তাদের রুচির পরিবর্তনে বাধ্য হয়। বলিউড ও হলিউড উৎসরিত হেজেমনিক আধুনিকতার গ্রাহক হতে গিয়ে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাংলা সিনেমাবিমুখ হয়, যার প্রভাব সিনেমার সঙ্গে সংগীতের জগতেও পড়তে থাকে। কেব্‌ল টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বলিউড, এমনকি টালিউডের মিউজিক এবং পাশ্চাত্যের সংগীত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমার সঙ্গে তার সংগীতকেও অপরিচিত করে তুলে খোদ বাংলাদেশের মানুষের কাছে।

নব্বই-পূর্ববর্তী বাংলাদেশে এন্ড্রু কিশোরের গানের জনপ্রিয়তার পেছনে বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিওতে কিংবা ক্যাসেটে বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় গানগুলো বাজতে থাকত প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। নব্বইয়ের দশকে গ্রামীণ পরিবেশে আমারও এন্ড্রু কিশোরের গানের সঙ্গে পরিচয় রেডিও এবং ক্যাসেট পেল্গয়ারের মাধ্যমে। রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, সুবীর নন্দী বা সৈয়দ আবদুল হাদীর গান এবং সঙ্গে সিনেমার সংলাপ ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী অনুষ্ঠান এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে তখনকার উঠতি তরুণদের অনেক শিল্পীর গান মুখস্থ হয়ে যেত রেডিওর গান শুনে শুনে; কিংবা গান অনুকরণ করেই অনেকে শিল্পী বনে যেতেন। সেই গান নিঃসন্দেহে তরুণদের মনের কথা বলত; প্রেম, আনন্দ, দুঃখ, বেদনার কথা বলত। যে তরুণরা তাদের জীবনেও সিনেমার গল্পের মতো স্বপ্ন দেখতেন, নিজেকে নিজের জীবনের নায়ক বা নায়িকা ভাবতেন।

গান কীভাবে আমাদের কাছে অর্থ উৎপাদন করে? প্রতীক বা চিহ্নরূপে গান আমাদের কাছে অর্থ তৈরি করে। আমেরিকান চিহ্নবিজ্ঞানী চার্লস স্যান্ডার্স পিয়ার্সের মতে, চিহ্ন হচ্ছে তাই, যা অন্য কিছুর পরিবর্তে ব্যবহূত হয়। ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক চিন্তুক স্টুয়ার্ট হলের মতে, প্রত্যেক চিহ্নের নিজের অর্থের পাশাপাশি অন্যান্য অর্থকেও মনে করিয়ে দেয়। আমরা যেসব চিহ্ন দিয়ে অর্থ তৈরি করি, সেসব চিহ্নকে পিয়ার্স তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো সিম্বলিক, আইকনিক ও ইন্ডেক্সিক্যাল।

পিয়ার্সের মতে, আমরা যখন নাটক, সিনেমা দেখি বা গান শুনি, তখন আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি ইন্ডেক্সিক্যাল রেফারেন্স। কারণ, ইন্ডেক্সিক্যাল রেফারেন্স যেমন কোনো সিনেমার গানের দৃশ্য বা কথা আমাদের নিজেদের মতো করে ভাবার সুযোগ দেয়, মনের মাঝে হাজারো অর্থ তৈরির সুযোগ করে দেয়। সেদিক থেকে কোনো চিহ্নের অর্থ নির্দিষ্ট না, অর্থাৎ একই চিহ্ন হাজারো মানুষের কাছে হাজারো অর্থ তৈরি করতে পারে। একই গান বা গানের কথা বা সিনেমার কোনো দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন রেফারেন্স দেয় বা অর্থ তৈরি করে।

চিহ্নের জগতে সবকিছুই রেফারেন্সিয়াল, এক গান অন্য গানের, এক শব্দ অন্য শব্দের বা এক বস্তু অন্য বস্তুর রেফারেন্স দেয় মাত্র। সে হিসেবে একটি গানের প্রতিটি শব্দ, সুর, তাল, ছন্দ ব্যক্তিক জীবন-অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ তৈরি করে।

এন্ড্রু কিশোরের গান সিনেমার সঙ্গে নব্বইপূর্ব বাংলাদেশের সামাজিক জগতের সম্পর্ক, গ্রাম-শহরের সম্পর্ক, স্থানিক-বৈশ্বকিতার সম্পর্ক বা মানুষের জীবন-জীবিকার পরিবর্তনের সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন বোঝাপড়ায় গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে থাকবে। নস্টালজিকতার স্মারক হিসেবে বা সাংস্কৃতিক স্মৃতি হিসেবে একটি প্রজন্মের কাছে এন্ড্রু কিশোরের গান হয়তো অনেক দিন বেঁচে থাকবে। কে জানে, নতুন প্রজন্মের কাছেও হয়তো তার গান পুনরুৎপাদিত হবে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে।

সহকারী অধ্যাপক, পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি


More Story on Source:

*here*

এন্ড্রু কিশোরের গানের সামাজিক তাৎপর্য

Dillard's - The Style of Your Life.

By allaboutian

open profile for all

Related Posts

Agen Slot Gacor Terbaru: Panduan Memilih dan Bermain di Situs Terpercaya

38 people 👁️ing this randomly Industri perjudian online terus berkembang pesat, khususnya di Indonesia. Salah…

CrackStreams – Overview NFL, MMA, NBA, Boxing HD UFC 

317 people 👁️ing this randomly Welcome to CrackstreamsLinks are updated ONE day BEFORE the event.…

New Zealand limited-overs tour of Australia postponed

3,147 people 👁️ing this randomly New Zealand limited-overs tour of Australia postponed News Try Adsterra…