এন্ড্রু কিশোর ও নরসুন্দর জহিরের গল্প
জহির। পেশায় নরসুন্দর। মিরপুরের সেনপাড়ার কোনো একটি সেলুনে কাজ করেন। এটুকুই তার সঙ্গে যোগাযোগের সম্বল। না আছে তার মুঠোফোন নম্বর, না আছে বাসার ঠিকানা। শনিবার বিকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে-ই সতীর্থ আরিফ আহমেদকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ি জহিরের খোঁজে। সেনপাড়ার খ্রিষ্টানপল্লীর কয়েকটি সেলুনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিআইপি নামে একটি সেলুনে জহির নামে একজন কাজ করেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জহির-ই কিনা তা নিশ্চিত নই। আরো কিছু সময় খোঁজাখুঁজির পর ভিআইপি সেলুনের সন্ধান পেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি কাজে আসেননি জহির। এদিকে সময় গড়িয়ে মাগরিব প্রায় ছুঁইছুঁই।
Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.
তার আগে বলে রাখি, এই ভিআইপি সেলুনে গত সাতাশ বছর চুল কাটিয়েছেন প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। আর এই দীর্ঘ সময়ে এন্ড্রু কিশোরের বাবা, এন্ড্রু কিশোর ও তার পুত্র সপ্তকের চুল কেটেছেন জহির। শেষমেষ জহিরের ফোন নম্বর নিয়ে ছুটে যাই মিরপুরের প্যারিস রোডে। সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। দেখা মিলে ৫০ বছর বয়েসি জহিরের। শুরু হয় আড্ডা। দীর্ঘ আলাপচারিতায় জহির শোনান এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে কাটানো নানা স্মৃতি।
মিরপুর ১০ নম্বরে খ্রিষ্টানপল্লীতে ১৯৯৩ সালে এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় জহিরের। ওই সময় এন্ড্রু কিশোরের বাবা অসুস্থ ছিলেন। স্মৃতি হাতরে জহির বলেন—“একদিন এন্ড্রুদা তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সেলুনে আসেন। দাদাকে দেখে তো আমি অবাক। কারণ তার আগে থেকেই দাদার গানের ভক্ত। আর সেই মানুষ আমার সামনে। তারপর এন্ড্রুদার সঙ্গে বাসায় গিয়ে তার বাবার চুল কেটে দিই। এর দুই মাস পর এন্ড্রুদার বাবা মারা যান। এন্ড্রুদা নিজেই একদিন তার বাবা মারা যাওয়ার খবর দেন। আমি এন্ড্রুদার ছেলে সপ্তকের চুল এখনো কাটি। একবার এন্ড্রুদা বলেন—‘জহির, তুই তো আমার বাবার কাজ করেছিস, আমার কাজ করেছিস, আমার ছেলের কাজও করছিস।’ আমি বলি, দাদা আপনি যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন আপনার কাজ করে যাব।”
এন্ড্রু কিশোর জহিরকে খুব স্নেহ করতেন। যখনই সেলুনে যেতেন জহিরের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। বিষয়টি জানিয়ে জহির বলেন—“দাদা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। সেলুনে আসলে আমার জন্য সিঙ্গারা নিয়ে আসতেন। আর বলতেন, ‘দ্যাখ, আমি এন্ড্রু কিশোর আমাকে মানুষ অনেক কিছু খাওয়ায়। কিন্তু আমি তোকে খাওয়াই। তোর জন্য সিঙ্গারা নিয়ে আসি। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।’ আমি বলতাম, হ্যাঁ দাদা, আমি তো ভাগ্যবান। কারণ আপনার আনা সিঙ্গারা আমি খেতে পারছি। দোকানের অন্য স্টাফরা খেয়েও খুশি হতো। দাদার সঙ্গে সব বিষয়ে আলাপ করতাম। কিন্তু কোনো দিন মাইন্ড করেন নাই।”
এন্ড্রু কিশোর প্রতি মাসে দুইবার জহিরের সেলুনে আসতেন। এটি তার গত ২৭ বছরের অভ্যাস ছিল। জহির বলেন—‘দাদা মাসে দুইবার সেলুনে আসতেন। গত ২৭ বছর আমি দাদার চুল কেটেছি। অন্য কারো কাজই দাদা পছন্দ করতেন না। দাদার ফেসের সঙ্গে কাটটা অন্য কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। তাছাড়া আমাকে খুব বিশ্বাস করতেন, ভালোবাসতেন। দাদা অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পর সেখান থেকেও আমাকে ফোন করতেন, খোঁজ নিতেন।’
এন্ডু কিশোরের সঙ্গে জহিরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে তাকে একবার কষ্ট দিয়েছিলেন জহির। যা নিয়ে আজও আফসোস করেন। জহির বলেন—“একদিন দাদা ফোন করে বললেন, ‘জহির আমি ১০ মিনিটের মধ্যে তোর ওখানে আসতেছি।’ আমিও বললাম, ঠিক আছে দাদা আসেন। কিন্তু দাদা আসার আগেই আরেক কাস্টমার সিটে বসে যায়। এমন পরিস্থিতি যে কাস্টমারকে তুলে দিতেও পারছিলাম না। তারপর দেড় ঘণ্টার মতো ওই লোকের কাজ করি। এদিকে দাদা পুরো সময়টা সেলুনের বাইরে ঘোরাঘুরি করলেন। দাদার এ অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট লাগছিল। পরে দাদা বললেন, ‘জহির তুই আমারে দেড় ঘণ্টা বসাইয়া রাখলি।’ পরে দাদার কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছিলাম।”
মন ভালো থাকলে জহিরকে গানও শুনাতেন এন্ড্রু কিশোর। ২০১৬ সালের এক ঘটনা বর্ণনা করে জহির বলেন—“দাদা তখন মিরপুর ১২ নম্বরে থাকেন। আমাকে বাসায় ডাকলেন। গিয়ে দাদার ছেলে সপ্তকের চুল কাটলাম। পরে দাদার চুল কাটলাম, ম্যাসাজ করলাম। দাদা বললেন, ‘জহির লাড্ডু খাবি? দিল্লিকা লাড্ডু?’ আরেকটা বিষয় বলে রাখি, দাদা সবসময় আমার সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতেন। কারণ আমি তো বিহারি। যার কারণে বাংলা কিছু শব্দ বুঝতে অসুবিধা হতো। তারপর দাদা লাড্ডু খাওয়ালেন। এরপর একটা গান শুনালেন। গানটি হলো—‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’। আমি দাদাকে বললাম, দাদা এই গানতো ‘কেউ কারো না’ সিনেমার। এ সিনেমার পরিচালক বুলাই। দাদা যখন কোন গান কোন সিনেমার, কখন গেয়েছেন মনে করতে পারতেন না, তখনই আমাকে ফোন করতেন। অনেক সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দাদা আমার কাছ থেকে এভাবে জেনে নিতেন। দাদা এত গান গেয়েছেন যে সবগুলো মনে রাখাও সম্ভব না।”
‘প্রতিজ্ঞা’ সিনেমায় ব্যবহৃত ‘এক চোর যায় চলে মন চুরি করে’ শিরোনামের গানটি শুনে খুব ভালো লাগে জহিরের। এটি ১৯৮৮ সালের ঘটনা। এরপর থেকে রেডিওতে এন্ড্রু কিশোরের গান নিয়মিত শুনতেন জহির। ছোটবেলা থেকেই প্রচুর সিনেমা দেখতেন তিনি। বিশেষ করে এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া গান যে সিনেমায় থাকতো তা কয়েকবার করে দেখতেন। জহির বলেন—“এন্ড্রুদার গাওয়া ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গানটি ‘প্রাণ সজনী’ সিনেমার। এটা আমি টানা তিনটা শো দেখেছিলাম শুধু এই গানের জন্য। ময়মনসিংহের ছায়াবানী সিনেমা হলে দুপুর ১২টায় ঢুকে রাত ১২টায় বের হয়েছিলাম। দাদা যদি পনেরো হাজার গান গেয়ে থাকেন তবে আমি ১০ হাজার গানের শিরোনাম বলতে পারব। এটাও বলতে পারব কোন গান কোন সিনেমার। সিনেমা দেখতে দেখতেই এটা রপ্ত করেছি।”
সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরে জহিরের কাছে শেষবার চুল কেটেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। সেদিনের কথা স্মরণ করতেই জহিরের মুখটা মলিন হয়ে যায়। জহির বলেন—‘‘সেদিন দাদা এসে বললেন, ‘জহির কাজটা তাড়াতাড়ি করে দে। আমার শরীর খারাপ লাগতেছে।’ পরে আধা ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করে দিই। সেই যে দাদা গেলেন আর দেখা হলো না।’’
জহির জানান, সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পরও তাকে ফোন করেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তিনি এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, ‘আগামী তিন মাস কারো সঙ্গে দেখা করা ডাক্তারের নিষেধ আছে। ভালো হইলে তো তোর দোকানে যাবই। তুই আবার চুল কেটে দিবি।’
‘‘দাদা যখন মারা যান ওই সময়ে আমার মনের ভেতর খুব অস্থিরতা কাজ করতেছিল। মন মানতেছিল না। ওই দিন (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে দাদা মারা যান। আর আমি দাদার শিষ্য মোমিনকে (মোমিন বিশ্বাস) সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিটে ফোন করি। ফোন ধরে মোমিন কাঁদতেছিল। আমি দাদার কথা জানতে চাইলে মোমিন বলে, ‘জহির ভাই আমি কথা বলতে পারতেছি না, আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’ বাসায় ফিরে টিভিতে দেখি, দাদা আর নেই। ওই দিন রাতে আমি আর ঘুমাতে পারি নাই।’’ কথাগুলো বলতে বলতে ছলছল করে উঠে জহিরের চোখ দুটো।
ঢাকা/শান্ত
More Story on Source:
*here*
এন্ড্রু কিশোর ও নরসুন্দর জহিরের গল্প
Published By
Latest entries
- allPost2024.11.24Buffalo King Megaways Slot Review Activate Free Spins
- allPost2024.11.24Bônus sem entreposto no cassino: Os 5 melhores bônus afinar Brasil
- allPost2024.11.24Bônus sem depósito como códigos puerilidade bônus sem armazém acostumado Bônus criancice cassino
- allPost2024.11.24Cassinos como oferecem bônus sem aperto puerilidade entreposto: confira 5 ótimas opções criancice sites
15 replies on “এন্ড্রু কিশোর ও নরসুন্দর জহিরের গল্প”
Hey, you used to write wonderful, but the last few posts have been kinda boring… I miss your super writings. Past few posts are just a little bit out of track! come on!
This actually answered my problem, thanks!
Just wanna input on few general things, The website style and design is perfect, the content is really excellent : D.
I’m still learning from you, but I’m trying to reach my goals. I certainly enjoy reading all that is posted on your site.Keep the aarticles coming. I loved it!
wonderful points altogether, you just gained a brand new reader. What would you suggest in regards to your post that you made some days ago? Any positive?
I like what you guys are up also. Such smart work and reporting! Keep up the superb works guys I¦ve incorporated you guys to my blogroll. I think it will improve the value of my website 🙂
I’ve been surfing on-line more than 3 hours today, but I never discovered any attention-grabbing article like yours. It’s pretty value enough for me. In my view, if all web owners and bloggers made good content material as you probably did, the internet shall be a lot more helpful than ever before.
Just wanna remark on few general things, The website style and design is perfect, the content is really great : D.
Needed to create you the little bit of word in order to thank you very much the moment again just for the breathtaking views you have contributed on this website. It was really incredibly generous with people like you to give easily just what numerous people would’ve offered for an ebook to end up making some bucks on their own, most notably considering that you might have tried it in case you desired. The smart ideas as well worked to be the great way to understand that most people have the same dreams really like my personal own to grasp more and more with regard to this matter. Certainly there are millions of more enjoyable opportunities up front for those who start reading your blog.
Hey, you used to write excellent, but the last several posts have been kinda boring?K I miss your super writings. Past several posts are just a bit out of track! come on!
Very interesting subject, appreciate it for posting.
Hello! I just would like to give a huge thumbs up for the great info you have here on this post. I will be coming back to your blog for more soon.
Outstanding post, you have pointed out some good points, I also think this s a very excellent website.
I really appreciate this post. I have been looking everywhere for this! Thank goodness I found it on Bing. You’ve made my day! Thx again
I’m not positive the place you’re getting your info, but good topic. I needs to spend a while finding out more or figuring out more. Thank you for wonderful information I used to be looking for this info for my mission.