হাওর বাংলায় পুষ্পমেঘে নৌকা ভাসে
‘ওগো বিদেশিনী তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও, এসো দুজনে প্রেমে হই ঋণী’- ছোটবেলায় সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে শুনেছিলাম বিখ্যাত এই গান। কিন্তু তখনো চেরি ফুলে এত মুগ্ধতা ছিল না! তার চেয়ে আমাদের দেশীয় শিউলি, শেফালী, বকুল বা কৃষ্ণচূড়া বেশি টানে! সূর্যমুখীও সুন্দরে সেরা। সূর্যের সাথে সাথে মুখ ঘুরায়।
Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.
যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতায় ফুলকে দেখা হয় ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে। ফুলের প্রতি ভালোবাসা চিরন্তন। ‘ফুল’ কথাটার মাঝেই লুকিয়ে আছে ভালো লাগার পরশ, অমেয় প্রেমভক্তি। ফুলকে ভালো লাগার মাঝেই যেন লুকানো আছে মন ভালো হওয়ার কোনো এক অজানা মন্ত্র। এ নিয়ে বহুল আলোচিত আরেকটি সঙ্গীতও রয়েছে- ‘ফুল যে ভালোবাসে না, সে নাকি মানুষ খুন করতে পারে।’ কী জানি, হবে না হয়তো।
ফুল হলো পবিত্রতা ও শুদ্ধতার প্রতীক। ইসলাম ধর্মের মহানবী (সা.) ফুলকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই তাঁর আদরের প্রিয় দুই নাতিকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ ছাড়া শিশুদের প্রতি মহানবীর (সা.) অগাধ আলোবাসা থেকেই তাদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। এ জন্যই মহানবী (সা.) তাঁর প্রিয় জিনিসগুলোকেও ফুলের সাথে উপমা দিয়েছেন। হজরত আবু সাইদ (রা) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার খুব আশঙ্কা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য জমিনের বরকত বন্ধ করে দেবেন।’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর জমিনের বরকত কী? হুজুর (সা.) বললেন, জমিনের ফুল।
কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে এমন কোনো মানুষ নেই যারা ফুলকে ভালোবাসে না। ছাদে, বাড়ির সামনে একটুখানি জায়গা পেলেই ফুলের বাগান গড়ে তোলেন শৌখিন মানুষেরা। কারণ একটি ফুলবাগান বাড়িকে, প্রতিষ্ঠানকে কিংবা কোনো স্থাপনাকে এনে দিতে পারে অন্যরকম অপার সৌন্দর্য। কিন্তু পুলিশ স্টেশনে পুষ্পোদ্যান সত্যিই অকল্পনীয়। অতি যত্নে হরেক রকম দেশি-বিদেশি ফুলের সমাহারে গড়ে তোলা হয়েছে ‘হাওর বাংলা গোলঘর’। তাতে হাওর ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা বাড়তি আয়েশ ও চিত্তবিনোদন পেতে উপচে পড়া ভিড় করছে।
এই অকল্পনীয় কাজটি করে প্রশংসায় ভাসছে কিশোরগঞ্জের হাওর কেন্দ্রবিন্দু মিঠামইন থানা পুলিশ প্রশাসন। থানার পতিত চত্বর এখন যেন প্রাণ ও প্রকৃতিতে এক স্বর্গোদ্যান। রংধনুর আভা ছড়িয়ে ফোটা ফুলের মেঘ যেন মর্ত্য ও স্বর্গের অপূর্ব মেলবন্ধনের মিতালিতে থানার বিস্তীর্ণ রঙ্গভূমি। নিখুঁত পরিপাটি রূপ সৌন্দর্য, ছোট ছোট পাপড়ির ভাঁজে কী এক অদ্ভুত শিহরণ! দূর থেকে যে কেউ ভাবতে পারেন মেঘ আজ রং পাল্টে কত যে বর্ণ ধারণ করেছে! প্রথম দেখায় ভালো লাগা, যেন এই বুঝি প্রেম হয়ে গেল!
এছাড়া ফুলের সাথে মালা ও তোড়ারও রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। ফুল আর ফুলদানিবিহীন গৃহ কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। বাসরসজ্জা, প্রেম নিবেদন, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ছাড়াও নানানভাবে ফুলের সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের নানান স্মৃতি।
আসলে ফুলের সৌন্দর্য মানুষকে পবিত্র হতে প্রেরণা জোগায়। ফাগুন তো ফুলে ফুলেই আগুন ঝরায়। ফুল-ফাগুনের আগুনই ধরেছে হাওরের মিঠামইন পুলিশ স্টেশনে। মনোমুগ্ধকর সুবাসও ছড়াচ্ছে চারদিকে। রকমারি ফুলে ভরে উঠেছে সেখানকার প্রাণ ও পরিবেশ, যেন ফুলশয্যা! সামনে দিয়ে অতিক্রম করলেও মনের মাঝে কেমন জানি একটা অন্য ধরনের অনুভূতি বা ভাবাবেগের উদয় হয়। যে মোহ বা আচ্ছন্নতা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না, তা পুষ্প দর্শনে মিলছে হাওর থানা মিঠামইনে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির রব্বানী শৈশব থেকেই পুষ্পপ্রেমিক। তিনি বলেন, দুবারের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তিনবারের নির্বাচিত এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এবং জেলা পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদের দিকনির্দেশনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় গড়া থানা প্রাঙ্গণের বিশাল পতিত জমিনে ফুলে-ফলে বিচিত্র বর্ণে চিত্রিত করা রক্তিম ও সবজি বাগান ঘেরা সবুজায়ন সত্যিই রোমাঞ্চকর। যে কারও মনকে আন্দোলিত করবে।
সেবার মনোভাবে হাওরকে পর্যটকদের কাছে চিত্তাকর্ষক করে তুলতেই এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এ ছাড়া ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না’ – এই গুণবাচক দিকটি পুষ্পের সাথে পুলিশকে অন্ত্যমিল করা হয়েছে- ‘পুলিশ আপনার জন্য নয়, মানবতার সেবায় ব্রত’।
বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে এই পুষ্প দর্শন (flower viewing)। আগত প্রত্যেক পর্যটকদের মগ্ন চৈতন্যে শিস দেয় সেই আলো-আঁধারি মায়াময় রূপ! ক্ষণিকের জন্য জীবনের এই বিস্ময়কর সৌন্দর্যের হাতছানির উদ্যমতায় হাওরের নান্দনিক রূপ দেখতে দলবেঁধে ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। মিঠামইনের হোসেনপুরে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের সন্নিকটে সূর্যমুখী ফুলের সম্মোহনী হাসি দেখতেও পড়ছে উপচে পড়া ঢল।
মোদ্দা কথা হলো, জীবনের প্রতি, ভালোবাসার প্রতি ম্লান হয়ে যাওয়া বিশ্বাস আর ফুলের প্রতি ভালোবাসা ও অব্যক্ত সৌন্দর্য কোথায় গিয়ে যেন মিলেছে। হৃদয়ের মোহনার সৃষ্টি এক বিন্দুতেই জীবনের প্রতিটি ধাপেই আছে রূপের বৈচিত্র্য, সৌন্দর্যও তীব্র। শিশির ভেজা ভোরে ফুলকুঁড়ির চোখ মেলা, সূর্যের প্রখর রোদে প্রস্ফুটিত হলুদ চন্দ্রমল্লিকার হাসি, রাতে চাঁদের মায়ায় ভেসে যাওয়া ফুলের মিষ্টি গন্ধ মনে অভিঘাত সৃষ্টি করে চলে। হৃদয়ে ওঠে সুরের ঝড়।
এই আপ্লুত হওয়া অব্যক্ত কথায় ব্যক্ত করেছেন হাওর ভ্রমণে আসা জেলা সদরের বৌলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নৌরিন আক্তার। তার স্বরচিত পঙক্তিমালাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বিস্তীর্ণ হাওরের নীল আকাশের বিশালতায় মাখিনু মধুমাখা মুগ্ধতা,/ কৃষকের ফসলি মাঠে সবুজ শ্যামলিমার ঊর্মিমালায় খুঁজিনু চঞ্চলতা।/ হিম শীতল আবেশে রূপ প্লাবন-মননে অব্যক্ত শিহরণে জাগিনু স্নিগ্ধতা,/ পুষ্প মেঘের মনোহর রূপমাধুরী নাচিনু চিত্তোম্মত্ততা।’
পর্যটনে এবং বিনোদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের বৃহৎ মিঠাপানির একক ‘ওয়েটার বডি’ হাওরাঞ্চল স্বপ্নীল রূপে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের হাওর। বলা হচ্ছে, বর্ষায় অস্ট্রেলিয়া আর শুকনায় নিউজিল্যান্ড যেন। আদতে হাওর তার চেয়েও বেশি- সুন্দরে সুন্দরে পাল্লা।
জলের কিনারায় বিশ্বের তাবৎ পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠায় পর্যটনশিল্পের প্রাচীনতম ইকো ট্যুরিজম এবং কমিউনিটি ট্যুরিজমের সর্বোৎকৃষ্ট তীর্থক্ষেত্র এখন হাওরাঞ্চল। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময়তার বিচারে ট্যুরিজমে দেশের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমগ্র হাওরাঞ্চল পর্যটকদের কাছে এক স্বপ্নের ঠিকানা। প্রতিনিয়ত ডাকছে অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনার দুর্নিবার হাতছানিতে। প্রকৃতিও সাজিয়েছে উদার নীড়ে তার সৃষ্টিকে। প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার মতো সেখানে রয়েছে পর্যটকদের চিত্তাকর্ষণে যত সব উপজীব্য, যা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে রূপকন্যার স্বপ্নপুরীতে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
More Story on Source:
*here*
হাওর বাংলায় পুষ্পমেঘে নৌকা ভাসে
Published By
Latest entries
- allPost2024.11.231 800+ Rotiri Gratuite Însă Depozit fie De Înscriere
- allPost2024.11.23Noua filă o cazinourilor online să încredere din România conj 2024
- allPost2024.11.23Cele apăsător recente coduri True Fortune Casino Bonus să depozit 2 în November 2024
- allPost2024.11.23Stanleybet bonus ci vărsare 100 Rotiri gratuite