Categories
allPost

এক স্বপ্নদ্রষ্টার তিরোধান

1,179 people 👁️ing this randomly

বাংলাদেশের একজন সফল শিল্পপতি, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা শিল্পোদ্যোক্তা নুরুল ইসলামের তিরোধানের খবর ভেসে উঠল তারই প্রতিষ্ঠিত যমুনা টেলিভিশনের পর্দায়। যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যমুনা টেলিভিশন এবং যুগান্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংবাদকর্মীরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছিলাম গত ১৪ জুন থেকে। ওই দিনই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।

Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.

Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.

তিনি ছিলেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। শুকতারার মতো তিনি দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন বিশাল যমুনা গ্রুপের লক্ষাধিক কর্মজীবী মানুষকে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে। শোকে কাতর আজ সবাই। অনেকের কাছে তিনি বাবুলভাই, নুরুল ইসলাম বাবুল নামেই তার ব্যাপক পরিচিতি। আজ তার দেহত্যাগের পর নানা পরিচয়ে তাকে উল্লেখ করবেন তার স্বজন, প্রিয়জন আর শুভানুধ্যায়ীরা। সফল উদ্যোক্তা, শিল্পপতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী, দূরদর্শী বিনিয়োগকারী, আপসহীন, দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন কর্মবীর- ইত্যাদি নানা অভিধায় নন্দিত হবেন তিনি আজ। নানাজনের মুখে নানাভাবে আলোচিত হবে আজ নুরুল ইসলাম বাবুল নামটি। এ সবকিছু ছাপিয়ে তার যে পরিচয়টি আজ আমাদের কাছে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে, সেটি হচ্ছে এই যে, তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা।

আজ থেকে ৫০ বছর আগে বয়স কত ছিল তার! বিশ কী পঁচিশ। একাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, পঁচিশে মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে দুনিয়ার ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যার পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ হন তরুণ নুরুল ইসলাম। অকুতোভয় একজন গেরিলা কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার গৌরব অর্জন করেন তিনি।

তার এ অবদানের কথা আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন তার সহযোদ্ধারা। নুরুল ইসলাম বাবুলের ইন্তেকালের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তার সহযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দুঃখভারাক্রান্ত মনে বলেছেন, নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ গঠনের ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির জীবনমরণের সংগ্রাম। যার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ’ নামক এই স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। চিরজীবী হয়েছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। যে লাল-সবুজ পতাকা আজ আমাদের অস্তিত্ব আর গৌরবের প্রতীক- তা অর্জিত হয়েছে এই নুরুল ইসলাম বাবুলের মতো অগণিত মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও ত্যাগের বিনিময়ে। ‘মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’- এ অভিধা যদি সত্য হয়, তাহলে নুরুল ইসলাম বাবুলও বাংলা মায়ের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। একজন স্বপ্নদ্রষ্টাও ছিলেন এই সাহসী যোদ্ধা। স্বাধীনতার পর ওই তরুণ বয়সেই একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সে কথাও বলেছেন মায়া ভাই। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের কাজে সম্পৃক্ত থেকে তিনি প্রায়ই মায়া ভাইকে বলতেন, ‘ভাই, আমি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই। নতুন বাংলাদেশে সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হলে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’

তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তার বড় প্রমাণ উপমহাদেশের বিস্ময়, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা আটতলাবিশিষ্ট শপিংমল আজকের যমুনা ফিউচার পার্ক। মনে পড়ে, ফিউচার পার্কের কাজ তখনও শেষ হয়নি। চার পাশে খাল-ডোবা। কাদামাটি, জমে থাকা পানি। মতিঝিল থেকে যুগান্তর অফিস সে অবস্থাতেই ফিউচার পার্কের বেষ্টনীতে বর্তমান ভবনটিতে চলে আসে। আমাদের মনে খুব কষ্ট হয়েছিল মতিঝিলের সহজগম্য এলাকা থেকে এই এতদূরে খাল-খন্দের মধ্যে অফিস চলে আসায়।

একদিন আমি অফিসে আসছি। মূল সড়কে গাড়ি থেকে নেমে কাদামাটি ডিঙিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে অফিসে ঢুকতে হতো। দেখি, বাবুল ভাই বাইরে ঘুরে নির্মাণকাজ দেখছেন।

আমি সালাম দিয়ে দাঁড়াতেই, তিনি মুখে হাসি মেখে বললেন, কেমন লাগতাছে নউতন অফিস?

আমি সবিনয়ে বললাম, ভাই, ঢুকতে খুব কষ্ট।

উনি ঝটিতে বলে উঠলেন, যান মিয়া দেইখেন, এই জায়গা একদিন আমরিকা হবে।

হ্যাঁ, তাই হয়েছে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক বানিয়ে চমক দেখিয়েছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পোদ্যোক্তা নুরুল ইসলাম। যমুনা ফিউচার পার্ক এখন আন্তর্জাতিক মানের শপিংমল হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত। বিদেশি অতিথিরা ঢাকা শহরে এলে ফিউচার পার্ক তাদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। আমরা যা কল্পনাও করতে পারিনি তাই বাস্তবায়িত হয়েছে। সফল হয়েছে স্বপ্নদ্রষ্টার ভাবনা।

পাকিস্তান আমলে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে। ওই কাগজগুলোর নীতি ছিল দল ও দলীয় নেতা বা প্রধানের গুণকীর্তন করা। সম্পাদকীয় নীতি ছিল, ‘তিনি বলিয়াছেন, ভালোই বলিয়াছেন, আর একটু ভালো বলিলে ভালো হইত’ গোছের। পরবর্তীকালে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর অর্থবান শিল্পপতিরা সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহী হন তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ও প্রতিপত্তি বজায় রাখার প্রয়োজনে।

একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন দেশপ্রেমিক হওয়ার কারণে নুরুল ইসলাম যুগান্তর প্রকাশে ব্রতী হন প্রকৃত অর্থেই দেশের কল্যাণের স্বার্থে। এ উক্তির সাক্ষী যুগান্তরের প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রধান কর্মবীর, বর্তমান সম্পাদক জনাব সাইফুল আলম। যুগান্তর প্রকাশের সময় পত্রিকায় সে সময়কার সেরা সংবাদকর্মীদের সমাবেশ ঘটানোর ছাড়পত্র দিয়েছিলেন তার সহযোদ্ধাদের। তার মুখ থেকে আমরা বারবার শুনেছি, ‘নির্ভয়ে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলবেন। অনেক রক্তের দামে আমরা স্বাধীনতা কিনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে সহযোগিতা করবেন। আর দেখবেন, যে কোনো অবস্থাতেই যেন দেশের উন্নয়ন ব্যাহত না হয়।’

আমাদের এই যুগান্তর এবং যমুনা টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করতে এবং চালাতে গিয়ে কতবার যে তিনি কত রকমের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি কখনও মাথা নত করেননি। যমুনা টেলিভিশনের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু হওয়ার পরও সত্য উন্মোচনে নুরুল ইসলাম বাবুলের দৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠটা এবং অকপট অবস্থানের কারণে কর্তৃপক্ষের রোষানলে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরে আবার সম্প্রচার শুরু হওয়া পর্যন্ত টিভির কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও কর্মীদের বসিয়ে বসিয়ে মাসের পর মাস বেতন দেয়ার নজির অন্য কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই।

তিনি সবাইকে হাসিমুখে অভয় দিয়ে বলতেন, ‘আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। যমুনা টিভি একদিন চালু হবেই ইনশাআল্লাহ। আপনারা কাজ করে যান।’

অবশেষে ঠিকই যমুনা টেলিভিশন আবার চালু হয়েছে এবং সেটি এখন দেশের একনম্বর নিউজ চ্যানেল।

আমাদের প্রিয় পত্রিকা যুগান্তরের জন্য আমরা একটা স্লোগান বানিয়েছি :
‘আসুক যত ঝড়,
সাদাকে সাদা
কালোকে কালো
বলবে যুগান্তর।’

আমাদের দিশারী, শুকতারা, আমাদের কান্ডারি, সফল স্বপ্নদ্রষ্টা, ৪১ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাহসী উদ্যোক্তা, বাংলা মায়ের ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, এ স্লোগান তো আপনার বাণী থেকেই ধার করা। আপনার আদর্শ এবং আপনার উক্তিকেই আমরা জাতির জন্য শুদ্ধাচারের মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছি।
আপনার অনুপ্রেরণা আমাদের সবার অন্তরে। আর সে অনুপ্রেরণায় আমরা পেরিয়ে যাব দুর্গম গিরি, দুস্তর পথ। আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব আপনার স্বপ্নগুলোকে সুমহান সম্ভাবনার লক্ষ্যে।

আপনাকে হারিয়ে আজ আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আপনি নেই এ সত্যটা মেনে নিতে মন চাইছে না কিছুতেই। কিন্তু যাওয়া-আসাটাই মানব জীবনের পরম সত্য। আপনি চলে গেলেন, কিন্তু আপনার স্বপ্ন ফুরাবে না। সে স্বপ্নই আমাদের সামনের পথ দেখাবে। দেশের মুক্তির জন্য আপনি যুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

 
 

source

Dillard's - The Style of Your Life.

By allaboutian

open profile for all

Related Posts

current news of Dhaka bangladesh ,CEC Huda

CEC Huda not Embarrassed | Current News of Dhaka Bangladesh

542 people 👁️ing this randomly CEC Huda not Embarrassed | Current News of Dhaka Bangladesh…

বরিশাল মহানগর বিএনপি’র ৩০ ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত

644 people 👁️ing this randomly বরিশাল মহানগর বিএনপি’র ৩০ ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত বরিশাল মহানগরীর আওতাধীন…

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব নেতাকর্মীর রিপোর্ট আছে 

520 people 👁️ing this randomly প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব নেতাকর্মীর রিপোর্ট আছে  সুনামগঞ্জ: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ…