বলিউডে গেলে ‘এক নম্বর থাকতেন’ এন্ড্রু কিশোর
বন্ধু হারানোর বেদনা নিয়ে লীনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিখ্যাত শিল্পী রাহুল দেব বর্মন ওর গান শুনে বলছিল- এন্ড্রু তুই চলে আয়, বোম্বে (এখন মুম্বাই) চলে আয়, এখানে এলে চিন্তাও করতে পারবি না। ও (এন্ড্রু) বলেছিল, আমি যাব না।
Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.
“এন্ড্রুর ক্যাটাগরির শিল্পী কিন্তু বোম্বেতে নেই, বাংলাদেশে তো নেই-ই। যদি রাহুল দেব বর্মণের সঙ্গে ওই ব্যাপারে সম্পৃক্ত হতে পারত, তাহলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে এক নম্বর শিল্পী থাকত এন্ড্রু। মানে কিশোর কুমার মারা যাওয়ার পরে।”
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের জগতে কয়েক দশক রাজত্ব করা এন্ড্রু কিশোর ক্যান্সারে ভুগে ৬৪ বছর বয়সে সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এন্ড্রু কিশোরের ‘জীবনের গল্প’ ফুরিয়ে গেল
এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে অনেক স্মৃতি একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা কণ্ঠশিল্পী লীনু বিল্লাহর। দেশের প্রথম দিককার ব্যান্ড ‘জিঙ্গেল’র সদস্য মঞ্জুরুল আলম বিল্লাহ লীনু, যিনি লীনু বিল্লাহ নামেই সঙ্গীত জগতে পরিচিত।
ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লীনু শহীদ আলতাফ মাহমুদের শ্যালক।
লীনু বিল্লাহ বলেন, “আমার সঙ্গে এন্ড্রু কিশোরের পরিচয় ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে। প্রথম দর্শনেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। …এরপর থেকে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব যে শুরু হল, তা ছিল সব সময়।”
গত শতকের ৭০ এর দশকে গানের নেশায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান এন্ড্রু কিশোর।
চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে; মেইল ট্রেন-এ আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর বাদল রহমানের এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীতেও কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান গাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। প্লেব্যাকে মাহমুদুন্নবীর পর সৈয়দ আবদুল হাদী ও খুরশীদ আলমের যে রাজত্ব চলছিল, তা নিজের করে নিতে থাকেন এন্ড্রু।
হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ভালবেসে গেলাম শুধু, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, সবাই তো ভালবাসা চায়, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, সবাই তো ভালবাসা চায়, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল, বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে- এমন অনেক গান এখনও মানুষের মুখে ফেরে। গান গেয়ে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন তিনি।
লীনু বলেন, “৪০-৪২ বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়িয়েছে এন্ড্রু। ওকে বিট করার মতো কেউই ছিল না। একমাত্র হাদী ভাই ছাড়া। হাদী ভাইয়ের ক্লাস ছিল অন্যরকম।
“আর এন্ড্রু কিশোরের ক্লাস! এন্ড্রু মানে সাংঘাতিক। একটা কথা বারবারই বলে- ওকে কিন্তু লোকে চিনত না। টেলিভিশনে আসত না খুব বেশি একটা। এসব ব্যাপারে খুব চুজি ছিল ও। ফেইম আর নেইম এর ব্যাপারে অন্যরকম ছিল।”
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন এন্ড্রু কিশোর। চিকিৎসার জন্য বিদেশ ছিলেন প্রায় এক বছর। কিন্তু চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দিলে দেশের মাটিতেই মরার ইচ্ছা জানিয়ে ফিরে আসেন তিনি এক মাস আগে।
এন্ড্রু কিশোরের কষ্টের শেষ দিনগুলো
লীনু বলেন, ভালো চাকরি ছেড়ে অর্থ আয়ের জন্য গানের ক্যারিয়ার শুরু করেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক ছাত্র এন্ড্রু কিশোর।
“এন্ড্রু বলত- গানের মাধ্যমে যদি আমি ভালো করতে পারি, তাহলে চাকরির চেয়ে ১০/১৫ গুণ বেশি আয় করতে পারব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ওর জীবনের যে সঞ্চয় ছিল, পুরোটাই খরচ হয়ে গেল এ রোগটার জন্য। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।”
শিল্পী হিসেবে এন্ড্রু কিশোর পারিশ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘মাইলফলক’ তৈরি করে গেছেন বলে মন্তব্য করেন সহশিল্পী লীনু।
তিনি বলেন, গত বছর একটি টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে ‘বেশ’ পারিশ্রমিক নিয়েছিল এন্ড্রু কিশোর। সেটা ‘মাইলস্টোন’ হয়ে থাকবে।
“ও বলত- মিডিয়াতে যাব, আমাকে যেন পারিশ্রমিকটা ওরকম দেয়। সাংঘাতিক বিষয়। সিংহের বাচ্চার মতো ছিল সে। যে জিনিসটা বাংলাদেশের অন্য কোনো শিল্পী করেনি। করতে পারবেও না।…ও যে রকম গাইত, সে রকম পার্সোনালিটিও ছিল।”
অসাধারণ গায়কির জন্য কোটি কোটি শ্রোতা এন্ড্রুকে ভুলতে পারবে না বলে মনে করেন লীনু বিল্লাহ।
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.