আরেকটি জন্মদিন এল, কিন্তু বুলবুল নেই
নতুন একটি বছর এল, সঙ্গে এল আরও একটি জন্মদিন। কিন্তু যে গুণী মানুষটির জন্মদিন, সেই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এ ধরায় নেই। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি সংগীত ব্যক্তিত্ব, যিনি কখনো গীতিকার, কখনো সুরকার, আবার কখনো সংগীত পরিচালকের ভূমিকা পালন করতেন। আবার এমন বহু গান রয়েছে, যেগুলোতে এই তিনটি দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে একাই সামলেছেন। তার আরও একটি বড় পরিচয়, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
Try Adsterra Earnings, it’s 100% Authentic to make money more and more.
আজ ১ জানুয়ারি সেই খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্মদিন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ওয়াফিজ আহমেদ এবং মায়ের নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।
সত্তরের দশকের শেষ লগ্ন থেকে সংগীত শিল্পে সক্রিয় ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গান শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে বেলাল আহমেদের পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের গীত রচনা ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। সে ছবিতে তার লেখা ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
বুলবুল স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, জেমস, আগুন, কনক চাঁপা, মনির খানসহ বাংলাদেশের সব জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন। সংগীত প্রতিভা অন্বেষণে বাংলাদেশের রিয়েলিটি অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ানের তিন মৌসুমে তিনি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইমতিয়াজ বুলবুল ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেমের তাজমহল’ চলচ্চিত্রের জন্য ২৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবার ও ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক প্রদান করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ পেযেছেন অন্যান্য অসংখ্য পুরস্কার।
সংগীতের এমন একজন তারকার জীবন প্রদীপ নিভে যায় ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি ৬৩ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। হৃৎপিণ্ডে ব্লক ধরা পড়ায় ২০১৮ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তার অপারেশন করা হয়। কিছুটা সুস্থও হন। কিন্তু সেই সুস্থতা স্থায়ী হয়নি। কয়েক মাস না যেতে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বুলবুল।
ঢাকাটাইমস/০১জানুয়ারি/এএইচ